_দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত, এই ঐতিহাসিক কান্তজির মন্দিরের দেবোত্তর জমিতেই অবৈধভাবে তৈরিকরা হচ্ছিল এক মসজিদ। যার বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছিল দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেট। অবশেষে রবিবার (২৪ মার্চ), এই মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ঢাকা: গত ১ মার্চ, এই বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। দিনাজপুর-১ আসনের সাংসদ জাকারিয়া জাকা মন্দিরের জমিতে ওই মসজিদটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ১৩ মার্চ নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলাশাসককে একটি চিঠি দিয়েছিলেন দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট, রণজিৎ কুমার সিংহ। তিনি জানিয়েছিলেন, বিতর্কিত জমিটি কান্তজি বিগ্রহের পক্ষে, সেবাইত মহারাজা জগদীশ নাথ রায়ের নামে রয়েছে। এই জমিরই এক অংশে মসজিদটি তৈরি হচ্ছিল। রণজিৎ কুমার সিংহ দাবি করেন, মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি তাঁকে জানিয়েছিলেন, ১৯৭৬ সালে দিনাজপুরের জেলাশাসক জমিটি তাদের দিয়েছিলেন। যদিও তিনি দলিল বলতে একটি হাতে লেখা তিন পৃষ্ঠার হলফনামা দেখিয়েছিলেন। সেই হলফনামাটি ভুয়ো বলে দাবি করেন রণজিৎ। তিনি আরও জানান, ১৯৯৯ সালের এক আইন অনুযায়ী, দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়।
click here to earn money
তাঁর এই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিল। এরপর, রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক। তারপরই ওই জমিতে মসজিদ নির্মাণের কাজ পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলাশাসক শাকিল আহমেদ জানিয়েছেন, জমিটি, রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জমি। যে এস্টেটের তিনি নিজেই একজন ট্রাস্টি। রবিবার দুপুরে, মসজিদ কমিটির সঙ্গে কথা বলে তিনি নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই জমির বদলে অন্য কোনও জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করা হবে।
মসজিদ কমিটির সভাপতির দাবি, জমিটি একসময় খাস জমি ছিল। পরে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের নামে রেকর্ড করা হয়। মন্দিরের পাশেই ৭৫-৮০ বছরের পুরনো একটি টিনের শেডের মসজিদ ছিল। সেখানে নামাজ পড়ার দায়গা কম পড়ছিল বলেই ২৫ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে মসজিদের একটি তিনতলা ভবন তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে তাঁর অভিযোগ, জেলা প্রশাসনই তাঁদের জমিটি বরাদ্দ করেছিল। এখন তারা সব কথা অস্বীকার করছে।
click here to earn money
এদিকে, স্থানীয় সাংসদ জাকারিয়া জাকার দাবি, তিনি এই বিতর্ক সম্পর্কে কিছু জানতেন না। কয়েকজন তাঁকে সেখানে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে জেনেছেন, ১৯৫০ সালের একটা মসজিদ ছিল ওখানে। ১৯৯৩ সালে একবার সেটা সংস্কার করা হয়েছিল। এবার টিনের শেডের মসজিদ ভেঙে, একটি পাকা মসজিদ করা হচ্ছিল। তাঁর আরও দাবি, বিষয়টি জানার পর, তিনি নিজেই জেলাশাসককে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
click here to earn money
এই মন্দির-মসজিদ জমি বিতর্ককে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা মাথা চাড়া দিতে পারে বলে মনে করছেজেলা প্রশাসন। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন মসজিদের নির্মাণকাজ বন্ধ করার পর, কেউ যাতে গুজব না ছড়াতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, তার জন্য পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ সতর্তা অবলম্বন করেছে। তবে, সার্বিকভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিকই রয়েছে। কোথাও কোনও উত্তেজনা নেই। জাকারিয়া জাকা বলেছেন, “আমার এলাকা শান্তিপূর্ণ এলাকা। সেখানে কেউ বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ পাবে না। স্থানীয় প্রশাসনও সতর্ক আছে। আমি নিজেও খোঁজখবর নিচ্ছি।”